অতিসম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) চূড়ান্ত হিসাব এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং সাময়িক হিসাবে ২০২০-২১ অর্থছরে প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ, যা বিশ্ব বাস্তবতায় সন্তোষজনক। করোনা মহামারীতেও এ প্রবৃদ্ধি সারা বিশ্বে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের এক উল্লেখযোগ্য অর্জন। কভিড-১৯-এর প্রভাবের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভঙ্গুরতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। এমনকি গত বছর জুনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করেছিল মাত্র ২ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক তো আরো এক কাঠি সরেস। তাদের প্রক্ষেপণ ছিল মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ। এবার আসা যাক বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সর্বশেষ প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের জুন ২০২১-এর ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’ প্রতিবেদনে বিশ্বে ২০২০ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করা হয়েছে মাইনাস ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে মাইনাস ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ধনাত্মক প্রবৃদ্ধি হার প্রাক্কলন করা হয়, যা ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। আইএমএফের এপ্রিল ২০২১ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
গত ৩০ জুলাই টরন্টোভিত্তিক আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক দি ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর রাইটস অ্যান্ড সিকিউরিটি (আইএফআরএসএস) বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের ওপর তুলনা করে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যার অর্থনীতি এ মহামারীতে পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো করেছে। তুলনায় আরো বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি গত ৫০ বছরে ২৭১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকিস্তান একসময় বাংলাদেশের চেয়ে ৭০ শতাংশ ধনী ছিল অথচ বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি ধনী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত মে মাসে পাকিস্তানি এক কলাম লেখক দ্য নিউজ পত্রিকায় ‘এইড ফ্রম বাংলাদেশ’ নামে একটি কলাম লেখেন। নিবন্ধে লেখক উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ যদি বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখে এবং পাকিস্তান যদি তার অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে না পারে তাহলে ২০৩০ সাল নাগাদ পাকিস্তানকে বাংলাদেশের সাহায্য নিতে হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারত সরকারের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামানিয়ান ‘দ্য প্যারাডক্স অব বাংলাদেশ মিরাকল’ নামে একটি নিবন্ধে বাংলাদেশকে উন্নয়নের উজ্জ্বল মডেল হিসেবে তুলে ধরে তা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের শেখার আছে মনে করেন। ব্লুমবার্গের কভিড রেজিলিয়েন্স র্যাংকিং অনুযায়ী যেসব দেশের জিডিপি ২০০ বিলিয়ন ডলারের ওপর, সেসব ৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৩তম। সর্বশেষ এপ্রিল ২০২১-এ প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, করোনা অনিশ্চয়তার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল। বাংলাদেশ কীভাবে করোনা মহামারীর মধ্যেও অর্থনীতির গতি ধরে রাখল, সে বিষয়ে আলোচনার আগে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় করোনা মোকাবেলায় কী কী উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে সেগুলো উল্লেখ প্রাসঙ্গিক হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এমন সময়ে প্রণয়ন করা হয়েছিল, যখন প্রথম করোনা অভিঘাত প্রবল ছিল। মার্চের শেষ থেকে মে মাস পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের কারণে জনজীবন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির ছিল। পরবর্তী সময়ে সরকার জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে ধীরে ধীরে লকডাউন খুলে দেয়। এ সময় মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত রাজস্ব, বিনিয়োগ, রফতানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ার ফলে দারিদ্র্যরেখার নিচে বা এর ওপরে থাকা জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ঝুঁকিতে পড়ে যায়। বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশ অনানুষ্ঠানিক খাত হওয়ার কারণে অনেকের কর্মসংস্থান চলে যায়। সরকার সাধারণ জনগণের কল্যাণের কথা বিবেচনায় নিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দ্রুত বিস্তৃত প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এর পরিমাণ ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা (১.২ ট্রিলিয়ন টাকা, যা জিডিপির ৪.৪ শতাংশ) এবং এ থেকে উপকারভোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ কোটি ৮০ লাখ।
করোনা মহামারী মোকাবেলায় সরকার চার ধরনের প্রধান কৌশল ব্যবহার করে: (১) আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয় খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি; (২) ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কর্মসংস্থান ধরে রাখতে এবং মাইক্রো, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পে অর্থনৈতিক গতি সঞ্চার করতে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান; (৩) দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর ও অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে ব্যাপকভাবে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী জোরদার করা। সামাজিক নিরাপত্তার প্রধান প্রধান কর্মকাণ্ড হলো বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, খোলাবাজারে বিক্রয় কার্যক্রমের মাধ্যমে ১০ টাকা ভর্তুকি মূল্যে চাল বিক্রয়, অরক্ষিত জনগণের মধ্যে নগদ হস্তান্তর, ১৫০টি দারিদ্র্যপীড়িত উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় ভাতা কার্যক্রমের সম্প্রসারণ, গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ; (৪) আর্থিক ধকল কাটিয়ে অর্থনীতিতে অর্থপ্রবাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নগদ রিজার্ভ হার ও রেপো হার কমানোর মাধ্যমে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা।
প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্যাকেজগুলো ছিল শিল্প ও সেবা খাতে ক্ষতিগ্রস্তদের মূলধন পুঁজি সরবরাহ, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পে মূলধন পুঁজি সরবরাহ, রফতানি উন্নয়ন তহবিল সম্প্রসারণ, কৃষি খাতে ভর্তুকি, রফতানিমুখী ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পকর্মীদের বেতন সহায়তার জন্য বিশেষ তহবিল। এছাড়া অন্যান্য প্যাকেজের মধ্যে কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমও ছিল। এসব ছাড়াও এবার আমাদের অর্থনীতি করোনার মধ্যেও কীভাবে অন্যান্য দেশের অর্থনীতির (২০১৯-২০ অর্থবছরে আইএমএফের হিসাবে বাংলাদেশ এশিয়ায় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ধনাত্মক প্রবৃদ্ধির অর্থনীতি) চেয়ে ভালো করল, সেসব বাস্তবতা খতিয়ে দেখা যাক।
প্রথমত, বিগত দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটি অন্যতম কারণ ছিল সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনাভিত্তিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং স্থিতিশীলতা। ফলে ধারাবাহিকভাবে বিগত দশকে প্রবৃদ্ধির হার প্রথমে ৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে এবং পরবর্তী সময়ে কভিডের আগ পর্যন্ত ৮ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়। ফলে গড় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছিল। এটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে বাংলাদেশের জিডিপি এক দশকে ২০০৯ সালের ১০০ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-এ ৩০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে এ সময়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির চলকগুলোর কোনোটিরই উল্লেখযোগ্য বিচ্যুতি ঘটেনি। রাজস্ব আহরণে চাপ থাকলেও বাংলাদেশ ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নিপুণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। বাজেট ঘাটতি সবসময় জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে। ঋণ-জিডিপির হার ৩৪ শতাংশের আশেপাশে ছিল, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান ও মালদ্বীপের ক্ষেত্রে এ হার জিডিপির কাছাকাছি বা তার বেশি ছিল। আইএমএফের বিশ্লেষণে বাংলাদেশকে ঋণ বহনের সক্ষমতা বিচারে শক্তিশালী বলা হয়েছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বেশির ভাগ সময়ে সহনশীল মাত্রায় ছিল।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তি হচ্ছে রেমিট্যান্স। করোনা শুরুর সময়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ অনেক অর্থনীতিবিদ প্রক্ষেপণ করেছিলেন যে বিদেশে বসবাসরত অভিবাসীদের কর্মসংস্থান হারানোর কারণে বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। অথচ বাস্তব চিত্রটি ছিল তার ঠিক বিপরীত। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের বৃদ্ধি ছিল ১১ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩৬ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ভোগ বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। রেমিট্যান্সের অভ্যন্তরীণ প্রবাহের ফলে একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ ভোগের চাহিদা অব্যাহত রয়েছে, অন্যদিকে এর ফলে তা বিনিয়োগেও গিয়েছে। বাংলাদেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিশেষত তরুণদের প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য উদ্যোক্তা তৈরি করা হয়েছে।
তৃতীয়ত, করোনার ফলে বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০১৯-২০-এ রফতানি হ্রাস পেলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর যে হিসাব পাওয়া গেছে, তাতে রফতানি ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রফতানি আয়ের একটা বড় প্রভাব রয়েছে। রফতানির মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮০ শতাংশের ওপর। এই তৈরি পোশাকের ওপর প্রত্যক্ষভাবে চার মিলিয়ন কর্মসংস্থান এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ১৪ মিলিয়ন লোকের জীবিকা নির্বাহ হয়। রফতানি ঘুরে দাঁড়ালে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। রেমিট্যান্সের মতো বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্মরণকালের রেকর্ড গড়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রিজার্ভের পরিমাণ ৩২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০১৯-২০-এ ৩৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে এবং গত অর্থবছরে তা ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। মূলত আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণ ও রফতানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনাকালে ক্রমাগত প্রবাসী আয়, রফতানি আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল বৃদ্ধি এ দুঃসময়ে সামষ্টিক অর্থনীতির শক্তিমত্তার পরিচায়ক।
চতুর্থত, করোনা মহামারীতে নতুন বাস্তবতায় প্রযুক্তি ব্যবহার এক নতুন আশীর্বাদ হয়ে আসছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ফ্রিল্যান্সিংয়ে তরুণদের উৎসাহ প্রদান করছে। বাংলাদেশ অনলাইন শ্রমিক সরবরাহে বিশ্বে দ্বিতীয়। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১ হাজার ২০০-এর অধিক স্টার্টআপ সক্রিয় রয়েছে এবং প্রতি বছর নতুন করে ২০০-এর অধিক স্টার্টআপ যুক্ত হচ্ছে। এর মাধ্যমে ১৫ লাখের অধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রশাসনের মতে, বাংলাদেশে ২০০০-এর অধিক ই-কমার্স ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকে ৫০ হাজারের অধিক ই-কমার্স পেজ রয়েছে। এর বাজার দ্রুতগতিতে প্রসারিত হচ্ছে এবং ২০১৯-এ এর পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এর পরিমাণ নিঃসন্দেহে আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে।
পরিশেষে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হওয়ার পূর্বাভাস আরো বোঝা যায় কর সংগ্রহ পরিস্থিতি থেকে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কর সংগ্রহ ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল মূলত শেষ তিন মাস অর্থাৎ এপ্রিল-জুন ২০২০-এ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শ্লথ হওয়ার কারণে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা সম্পূর্ণ ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৯ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি গত এক দশকে এমন শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে যে করোনাকালে যা আঘাত পেয়েছে তা ধারণ করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে হয়তোবা তা ততটা সত্যি না-ও হতে পারে। সুতরাং সে প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য হার বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার যে হিসাব দিয়ে দেশের কতিপয় অর্থনীতিবিদ হতাশা ব্যক্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছেন, তা পুরোপুরি বাস্তব বলে প্রতীয়মান হয় না। উন্নত সড়ক যোগাযোগ, জন ও পণ্য চলাচলে সারা দেশের এক সমন্বিত বাজার ব্যবস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত তৈরি করেছে, পরিসংখ্যান ও অর্থনীতির সূচকগুলো সে কথাই বলে। বাংলাদেশ যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও অর্থনীতিতে যথেষ্ট দুর্যোগ সহনশীল, তা কভিড-১৯ মহামারী আবারো প্রমাণ করল। তার পরও কভিড প্রতিরোধে সর্বাধিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবেই। বাজার ব্যবস্থা সংহত ও চালু রাখতে হবে।