পরিকল্পনা কমিশনের সৃষ্টি

প্রাপ্ত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সকল জনগণের দ্রুত জীবনযাত্রার মান উন্নয়নই হচ্ছে উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশের সংবিধান (অনুচ্ছেদ-১৫) অনুযায়ী পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সকল অঞ্চলের সকল নাগরিকের দ্রুত জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। কার্যকরভাবে এ দায়িত্ব পালনের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনের উপর অগ্রাধিকার দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র দেড় মাসের মধ্যে তথা ৩১ জানুয়ারী ১৯৭২ সনে ‘বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন’ প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৫৬ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) ‘পরিকল্পনা বোর্ড’ গঠনের মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সূচনা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা সেল গঠন করে। স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরে পরিকল্পিত দ্রুত উন্নতি অর্জনের বিষয়টি ত্বরান্বিত করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রখ্যাত পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের পরিকল্পনা কমিশন গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই একে দেয়া হয় উচ্চ পর্যায়ের পেশাদারী সংগঠনের মর্যাদা। এই কমিশন গঠিত হয় একজন চেয়ারম্যান, একজন ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং তিন জন সদস্যের সমন্বয়ে। পরিকল্পনা মন্ত্রী পদাধিকার বলে কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। দৈনন্দিন কার্যাবলী পরিচালনার জন্য এবং নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য মন্ত্রীর পদ মর্যাদা সম্পন্ন একজন ডেপুটি চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন (তাঁর কেবিনেট মন্ত্রীর ‘র‍্যাঙ্ক’‍ ছিল না)। কমিশনের অন্যান্য সদস্যগণ ছিলেন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন। সচিব পদমর্যাদার ‘প্রধান’ এর অধীনে মোট ১০টি বিভাগ সৃষ্টি করা হয়; বিভাগসমূহ হচ্ছে-সাধারণ অর্থনীতি, কার্যক্রম ও মূল্যায়ন, কৃষি, শিল্প, পানি সম্পদ, পল্লী প্রতিষ্ঠান, ভৌত অবকাঠামো, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো, বহিঃসম্পদ এবং প্রশাসন।

পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের কাজ সম্পন্ন করার জন্য পৃথকভাবে ‘‘প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যুরো’’ প্রতিষ্ঠা করা হয় যা পরবর্তীতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ’’ নামে আলাদা বিভাগে রূপান্তরিত হয়। এর অব্যবহিত পরে বহিঃসম্পদ সংগ্রহের দায়িত্ব পরিকল্পনা কমিশন থেকে পৃথক করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বর্তমান ‘‘অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ’’ নামে পৃথক বিভাগের ওপর ন্যস্ত করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সকল প্রশাসনিক ও নির্বাহী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘‘পরিকল্পনা বিভাগ’’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। একই সাথে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন এর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ কমিশনের চেয়ারপার্সন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদূরপ্রসারী চিন্তাধারা এবং তাঁর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনায় সর্বপ্রথম ১৯৭৪ সালে বর্ণিত ৪টি পরিসংখ্যান সংস্থাকে একীভূত করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ১৯৭৫ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোকে প্রশাসনিক সহযোগিতা ও দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিসংখ্যান বিভাগ সৃষ্টি করা হয়। ২০০২ সালে পরিসংখ্যান বিভাগকে অবলুপ্ত করে পরিকল্পনা বিভাগের একটি অনুবিভাগ করা হয়। দেশের উন্নয়নে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১০ সালে পরিসংখ্যান বিভাগ পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা হয়।  অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, এমপি এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার (অব:) বীর উত্তম, এমপি এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। উল্লেখ্য, একটি আন্তর্জাতিক মানসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ সরকারের আগের মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) একটি দৃষ্টি নন্দন সুপরিসর আধুনিক ভবন নির্মিত হয় এবং ২৫ অক্টোবর, ১৯৯৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উক্ত ভবনটি উদ্বোধন করেন।